শাব্দিক অর্থে হাদীস (الحديث) শব্দের অর্থ কথা; প্রাচীন ও পুরাতনের বিপরীত বিষয়। এ অর্থে যেসব কথা, কাজ ও বস্তু পূর্বে ছিল না, এখন অস্তিত্ব লাভ করেছে, তাই হাদীস। ফকীহগণের পরিভাষায় মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ্র মনোনীত রাসূল হিসাবে যা কিছু বলেছেন, যা কিছু করেছেন এবং যা কিছু বলার বা করার অনুমতি দিয়েছেন অথবা সমর্থন জানিয়েছেন, তাকে হাদীস বলে। কিন্তু মুহাদ্দিসগণ-এর সংগে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কিত বর্ণনা ও তাঁর গুণাবলী সম্পর্কিত বিবরণকেও হাদীসের অন্তর্ভুক্ত করেন। এ হিসাবে হাদীসকে প্রাথমিক পর্যায়ে তিন শ্রেণীতে ভাগ করা যায়ঃ কাওলী হাদীস, ফেলী হাদীস ও তাকরীরী হাদীস।
প্রথমতঃ কোনো বিষয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা বলেছেন, অর্থাৎ যে হাদীসে তাঁর কোন কথা উদ্ধৃত হয়েছে, তাকে কাওলী (কথামূলক) হাদীস বলে।
দ্বিতীয়তঃ মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাজকর্ম, চরিত্র ও আচার-আচরণের ভেতর দিয়েই ইসলামের যাবতীয় বিধি-বিধান ও রীতি-নীতি পরিস্ফুটিত হয়েছে। অতএব যে হাদীসে তাঁর কোন কাজের বিবরণ উল্লেখিত হয়েছে তাকে ফেলী (কর্মমূলক) হাদীস বলে।
তৃতীয়তঃ সাহাবীগণের যেসব কথা ও কাজ মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুমোদন ও সমর্থনপ্রাপ্ত হয়েছে সে ধরনের কোন কথা বা কাজের বিবরণ হতেও শরীআতের দৃষ্টিভংগি জানা যায়। অতএব যে হাদীসে এ ধরনের কোন ঘটনার বা কাজের উল্লেখ পাওয়া যায় তাকে তাকরীরী (সমর্থনমূলক) হাদীস বলে ।
হাদীসের অপর নাম সুন্নাত।(السنة) সুন্নাত শব্দের অর্থ চলার পথ, কর্মের নীতি ও পদ্ধতি। যে পন্থা ও রীতি মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অবলম্বন করতেন তা-ই সুন্নাতুন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।
অন্য কথায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক প্রচারিত উচ্চতম আদর্শই হলো সুন্নাত।
কুরআন মজীদে মহোত্তম আদর্শ (مثالية عظيمة) বলতে এই সুন্নাতকেই বুঝানো হয়েছে। (ফিক্হ শাস্ত্রে সুন্নাত বলতে ফরয ও ওয়াজিব ব্যতীত ইবাদতরূপে যা করা হয় তা বুঝায়, যেমন সুন্নাত নামাজ)।
হাদীসকে আরবী ভাষায় খবর (الأخبار)-ও বলা হয়। তবে খবর শব্দটি যুগপৎভাবে হাদীস ও ইতিহাস উভয়টিই বুঝায়।
আছার (شكرًا لك) শব্দটিও কখনও কখনও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদীস নির্দেশ করে। কিন্তু অনেকেই হাদীস ও আছারের মধ্যে কিছু পার্থক্য করে থাকেন। তাঁদের মতে সাহাবীদের থেকে শরীআত সম্পর্কে যা কিছু উদ্ধৃত হয়েছে, তাকে আহার বলে। তবে এ ব্যাপারে সবাই একমত যে, শরীআত সম্পর্কে সাহাবীদের নিজস্বভাবে কোন বিধান দেয়ার প্রশ্নই উঠে না।
কাজেই এ ব্যাপারে তাদের উদ্ধৃতিসমূহ মূলত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উদ্ধৃতি। কিন্তু কোন কারণে শুরুতে তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নাম উল্লেখ করেননি। উসূলে হাদীসের পরিভাষায় এসব আহারকে বলা হয় ‘মাওকূফ হাদীস।