Type Here to Get Search Results !

☆📘সুনানে ইবনে-মাজাহ☆📘☆ হাদীস সংকলন ও সংরক্ষণ📘☆


যাবতীয় প্রশংসা বিশ্বজাহানের প্রতিপালক আল্লাহ তাআলার জন্য। সালাত ও সালাম তাঁর প্রিয় হাবীব মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ্র উপর।

হাদীস মুসলিম মিল্লাতের এক অমূল্য সম্পদ, ইসলামী শরীআতের অন্যতম অপরিহার্য উৎস এবং ইসলামী জীবন বিধানের অন্যতম মূল ভিত্তি। কুরআন মজীদ যেখানে ইসলামী জীবন ব্যবস্থার মৌলনীতি পেশ করে, হাদীস সেখানে এই মৌলনীতির বিস্তারিত বিশ্লেষণ ও তা বাস্তবায়নের কার্যকর পন্থা বলে দেয়। কুরআন ইসলামের প্রদীপ-স্তম্ভ, হাদীস তার বিচ্ছুরিত আলো। ইসলামী জ্ঞান-বিজ্ঞানে কুরআন যেন হৃদপিণ্ড, আর হাদীস এই হৃদপিণ্ডের সাথে সংযুক্ত ধমনী। জ্ঞানের বিশাল ক্ষেত্রে এই ধমনী প্রতিনিয়ত তাজা তপ্ত শোণিতধারা প্রবাহিত করে এর অংগ-প্রত্যংগকে অব্যাহতভাবে সতেজ ও সক্রিয় রাখে। হাদীস একদিকে যেমন কুরআনুল আযীমের নির্ভুল ব্যাখ্যা দান করে, অনুরূপভাবে তা পেশ করে কুরআনের ধারক ও বাহক মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পবিত্র জীবন-চরিত, কর্মনীতি ও আদর্শ এবং তাঁর কথা ও কাজ, হেদায়াত ও উপদেশের বিস্তারিত বিবরণ। এজন্যই ইসলামী জীবন-বিধানে কুরআনে হাকীমের পরপরই হাদীসের স্থান।

আল্লাহ তাআলা জিবরাঈল আমীনের মাধ্যমে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর যে ওহী নাযিল করেছেন, তাই হচ্ছে হাদীসের মূল উৎস। ওহী অর্থ ঃ ইশারা করা, গোপনে অপরের সাথে কথা বলা, অপরের অজ্ঞাতসারে কাউকে কিছু জানিয়ে দেয়া” (উমদাতুল কারী, ১ম খণ্ড, পৃ. ১৪)। ওহীলব্ধ জ্ঞান দুই প্রকার। প্রথম প্রকার মৌল জ্ঞান, যা প্রত্যক্ষ ওহীর (الوحي المباشر)  মাধ্যমে প্রাপ্ত, যার নাম 'কিতাবুল্লাহ' বা ‘আল-কুরআন'। এর ভাব ও ভাষা উভয়ই আল্লাহ্, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা হুবহু আল্লাহ্র ভাষায় প্রকাশ করেছেন। দ্বিতীয় প্রকারের জ্ঞান--যা প্রথম প্রকারের জ্ঞানের ভাষ্য এবং যা পরোক্ষ ওহীর (الوحي غير المباشر) মাধ্যমে প্রাপ্ত, এর নাম 'সুন্নাহ' বা 'আল-হাদীস'। এর ভাব আল্লাহ্, কিন্তু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা নিজের ভাষায়, নিজের কথা এবং নিজের কাজ ও সম্মতির মাধ্যমে প্রকাশ করেছেন। প্রথম প্রকারের ওহী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর সরাসরি নাযিল হতো এবং তাঁর কাছে উপস্থিত লোকেরা তা উপলব্ধি করতে পারতো। কিন্তু দ্বিতীয় প্রকারের ওহী তাঁর উপর প্রচ্ছন্নভাবে নাযিল হতো এবং অন্যরা তা উপলব্ধি করতে পারতো না।

আখিরী নবী ও রাসূল হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরআনের ধারক ও বাহক, কুরআন তাঁর উপরই নাযিল হয়। আল্লাহ তাআলা তাঁর কিতাবে মানব জাতিকে একটি আদর্শ অনুসরণের ও অনেক বিধি-বিধান পালনের নির্দেশ দিয়েছেন, কিন্তু তা বাস্তবায়নের বিস্তারিত বিবরণ দান করেননি। এর ভার ন্যস্ত করেছেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর। তিনি নিজের কথা, কাজ ও আচার-আচরণের মাধ্যমে কুরআনের আদর্শ ও বিধান বাস্তবায়নের পন্থা ও নিয়ম-কানুন বলে দিয়েছেন। কুরআনকে কেন্দ্র করেই তিনি ইসলামের এক পূর্ণাঙ্গ জীবনাদর্শ ও জীবনবিধান পেশ করেছেন। অন্য কথায়, কুরআন মজীদের শিক্ষা ও নির্দেশসমূহ ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে কার্যকর করার জন্য নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে পন্থা অবলম্বন করেছেন, তাই হচ্ছে হাদীস।

হাদীসও যে ওহীর সূত্রে প্রাপ্ত এবং তা শরীআতের মৌল বিধান পেশ করে, তার প্রমাণ কুরআন ও মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণীর মধ্যেই বিদ্যমান রয়েছে । মহান আল্লাহ তাঁর প্রিয় নবী সম্পর্কে বলেনঃ

وَمَا يَنْطِقُ عَنِ الْهَوَى . إِنْ هُوَ إِلَّا وَحْى يُوحَى

“তিনি (নবী) নিজের ইচ্ছামত কোন কথা বলেন না, যা কিছু বলেন, তা সবই আল্লাহ্ ওহী” (সূরা নাজ্‌মঃ ৩, ৪)।

وَلَوْ تَقُولُ عَلَيْنَا بَعْضَ الأَقَاوِيلِ ، لأخَذْنَا مِنْهُ بِالْيَمِينِ ، ثُمَّ لَقَطَعْنَا مِنْهُ الوتين :

“তিনি (নবী) যদি নিজে রচনা করে কোন কথা আমাদের নামে চালিয়ে দিতেন, তাহলে আমরা তার ডান হাত ধরে ফেলতাম এবং তার কণ্ঠনালী ছিন্ন করে ফেলতাম ” (সূরা আল-হাক্কাহঃ ৮৬/৮৮ )।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “রূহুল কুদুস (জিবরাঈল) আমার মানসপটে এ কথা ফুঁকে দিলেন, নির্দ্ধারিত পরিমাণ রিযিক পূর্ণ মাত্রায় গ্রহণ না করা পর্যন্ত এবং নির্দিষ্ট আয়ুষ্কাল শেষ হওয়ার পূর্বে কোন প্রাণীই মরতে পারে না” (বায়হাকী, শারহুস সুন্নাহ)। “আমার নিকট জিবরাঈল (আ) এলেন এবং আমার সাহাবীগণকে উচ্চস্বরে তাকবীর ও তাহলীল বলতে আদেশ করার জন্য আমাকে নির্দেশ দিলেন” (নাইলুল আওতার, ৫ম খণ্ড, পৃ. ৫৩)। “জেনে রাখো! আমাকে কুরআন দেয়া হয়েছে এবং তার সাথে দেয়া হয়েছে এর অনুরূপ আরও একটি জিনিস” (আবু দাউদ, ইবনে মাজা, দারিমী)। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আনুগত্য করার জন্য আল্লাহ পাক আমাদেরকে নিম্নোক্ত ভাষায় নির্দেশ দিয়েছেন :

وَمَا أَتَاكُمُ الرَّسُولُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهْكُمْ عَنْهُ فَانْتَهُواء.

“রাসূল তোমাদের যা কিছু দেন তা গ্রহণ করো এবং যা করতে নিষেধ করেন তা থেকে বিরত থাকো” (সূরা হাশর : ৭)।

হাদীস অধ্যয়নের উদ্দেশ্য সম্পর্কে আল্লামা বদরুদ্দীন আল-আয়নী (র) লিখেছেন, দুনিয়া ও আখেরাতের পরম কল্যাণ লাভই হচ্ছে হাদীস অধ্যয়নের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য। আল্লামা কিরমানী (র) লিখেছেন, “কুরআনের পর সকল প্রকার জ্ঞানের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ, সর্বোত্তম এবং তথ্য ও তত্ত্ব সমৃদ্ধ সম্পদ হচ্ছে ইলমে হাদীস। কারণ এই জ্ঞানের সাহায্যেই আল্লাহ্র কালামের লক্ষ্য ও তাৎপর্য জানা যায় এবং তাঁর হুকুম-আহকামের উদ্দেশ্য অনুধাবন করা যায়।”


হাদীসের পরিচয়

শাব্দিক অর্থে হাদীস (الحديث) শব্দের অর্থ কথা; প্রাচীন ও পুরাতনের বিপরীত বিষয়। এ অর্থে যেসব কথা, কাজ ও বস্তু পূর্বে ছিল না, এখন অস্তিত্ব লাভ করেছে, তাই হাদীস। ফকীহগণের পরিভাষায় মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ্র মনোনীত রাসূল হিসাবে যা কিছু বলেছেন, যা কিছু করেছেন এবং যা কিছু বলার বা করার অনুমতি দিয়েছেন অথবা সমর্থন জানিয়েছেন, তাকে হাদীস বলে। কিন্তু মুহাদ্দিসগণ-এর সংগে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কিত বর্ণনা ও তাঁর গুণাবলী সম্পর্কিত বিবরণকেও হাদীসের অন্তর্ভুক্ত করেন। এ হিসাবে হাদীসকে প্রাথমিক পর্যায়ে তিন শ্রেণীতে ভাগ করা যায়ঃ কাওলী হাদীস, ফেলী হাদীস ও তাকরীরী হাদীস।

প্রথমতঃ কোন বিষয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা বলেছেন, অর্থাৎ যে হাদীসে তাঁর কোন কথা উদ্ধৃত হয়েছে, তাকে কাওলী (কথামূলক) হাদীস বলে।

দ্বিতীয়তঃ মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাজকর্ম, চরিত্র ও আচার-আচরণের ভেতর দিয়েই ইসলামের যাবতীয় বিধি-বিধান ও রীতি-নীতি পরিস্ফুটিত হয়েছে। অতএব যে হাদীসে তাঁর কোন কাজের বিবরণ উল্লেখিত হয়েছে তাকে ফেলী (কর্মমূলক) হাদীস বলে।

তৃতীয়তঃ সাহাবীগণের যেসব কথা ও কাজ মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুমোদন ও সমর্থনপ্রাপ্ত হয়েছে সে ধরনের কোন কথা বা কাজের বিবরণ হতেও শরীআতের দৃষ্টিভংগি জানা যায়। অতএব যে হাদীসে এ ধরনের কোন ঘটনার বা কাজের উল্লেখ পাওয়া যায় তাকে তাকরীরী (সমর্থনমূলক) হাদীস বলে ।

হাদীসের অপর নাম সুন্নাত।(السنة) সুন্নাত শব্দের অর্থ চলার পথ, কর্মের নীতি ও পদ্ধতি। যে পন্থা ও রীতি মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অবলম্বন করতেন তা-ই সুন্নাতুন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। অন্য কথায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক প্রচারিত উচ্চতম আদর্শই হলো সুন্নাত। কুরআন মজীদে মহোত্তম আদর্শ (مثالية عظيمة) বলতে এই সুন্নাতকেই বুঝানো হয়েছে। (ফিক্হ শাস্ত্রে সুন্নাত বলতে ফরয ও ওয়াজিব ব্যতীত ইবাদতরূপে যা করা হয় তা বুঝায়, যেমন সুন্নাত নামায)। হাদীসকে আরবী ভাষায় খবর (الأخبار)-ও বলা হয়। তবে খবর শব্দটি যুগপৎভাবে হাদীস ও ইতিহাস উভয়টিই বুঝায় ।

আছার (شكرًا لك) শব্দটিও কখনও কখনও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদীস নির্দেশ করে। কিন্তু অনেকেই হাদীস ও আছারের মধ্যে কিছু পার্থক্য করে থাকেন। তাঁদের মতে সাহাবীদের থেকে শরীআত সম্পর্কে যা কিছু উদ্ধৃত হয়েছে, তাকে আহার বলে। তবে এ ব্যাপারে সবাই একমত যে, শরীআত সম্পর্কে সাহাবীদের নিজস্বভাবে কোন বিধান দেয়ার প্রশ্নই উঠে না। কাজেই এ ব্যাপারে তাদের উদ্ধৃতিসমূহ মূলত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উদ্ধৃতি। কিন্তু কোন কারণে শুরুতে তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নাম উল্লেখ করেননি। উসূলে হাদীসের পরিভাষায় এসব আহারকে বলা হয় ‘মাওকূফ হাদীস।

☆📗সুনানে ইবনে-মাজাহ☆📗☆হাদীস সংকলণ ও তার প্রচার📗☆

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.